ইসরায়েলি হামলার জেরে আবার যুদ্ধ শুরুর শঙ্কায় লেবানন

আইন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান—কোনো কিছু আমলে না নিয়েই ফিলিস্তিনের গাজায় অব্যাহত হামলার মধ্যেই নতুন করে লেবাননেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

আইন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান—কোনো কিছু আমলে না নিয়েই ফিলিস্তিনের গাজায় অব্যাহত হামলার মধ্যেই নতুন করে লেবাননেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শনিবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে চালানো হামলায় সাত লেবানিজ নাগরিক নিহত হন। যা এই অঞ্চলে নতুন করে যুদ্ধের শঙ্কা তৈরি করেছে।

গত শনিবার বোমা হামলা চালিয়ে অন্তত ৩৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যার পর গতকাল উপত্যকার খান ইউনিসে হামলা চালিয়ে হামাসের এক নেতাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গতকাল পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এর মধ্যে শনিবার লেবাননেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৭ নভেম্বরের যুদ্ধবিরতির পর এখন পর্যন্ত বৃহত্তম সামরিক অভিযানে লেবাননে হিজবুল্লাহর কয়েক ডজন লক্ষ্যবস্তুতে দ্বিতীয় দফায় হামলার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। এ পরিস্থিতিতে নতুন যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম। তিনি বলেছেন, ‘লেবানন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। দক্ষিণ সীমান্তে ইসরায়েলের নতুন সামরিক অভিযান লেবানন ও এর জনগণের জন্য দুর্দশা বয়ে আনবে।’

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর দাবি, গত শনিবার লেবানন থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালানো হয়। এর জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। তবে হিজবুল্লাহ বলছে, এসব হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। উল্টো লেবাননে হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েল অজুহাত তৈরি করছে।

খোঁড়া অজুহাতে ইসরায়েল যেন অব্যাহত চুক্তিভঙ্গ ও হামলা না চালিয়ে যেতে পারে এ জন্য যুদ্ধবিরতির পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন লেবাননের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মিশেল মেনাসসা।

নভেম্বরে যুদ্ধবিরতির পর শর্ত অনুযায়ী, লেবাননের ভূখণ্ড থেকে সেনাদের সরিয়ে নেয়নি ইসরায়েল। চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের জন্য জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েল তা ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্ধিত করেছিল। এরপর থেকে ইসরায়েলি সৈন্যরা লেবাননের অভ্যন্তরে পাঁচটি স্থানে অবস্থান করছে। তাদের সামরিক বাহিনী হিজবুল্লাহর কথিত লক্ষ্যবস্তুতে কয়েক ডজন মারাত্মক হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় সামরিক নাগরিকরাও হতাহতের শিকার হয়েছে।

যদিও লেবাননের ঘটনাবলির জন্য দেশটির সরকারকে দায়ী করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। তবে সর্বশেষ ইসরায়েলি হামলার পর লেবাননের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘যুদ্ধ নাকি শান্তি, সে সিদ্ধান্ত লেবাননই নেবে। এটা দেখিয়ে দেয়ার জন্য আমাদের সব ধরনের নিরাপত্তা ও সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র আন্দ্রেয়া টেনেন্টি, আল জাজিরাকে বলেন, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা সব পক্ষ সর্বোচ্চ সংযমের আহ্বান জানিয়েছি।’ দোহার হামাদ বিন খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুলতান বরকত সতর্ক করে বলেছেন, যতদিন ইসরায়েলি হামলা চলবে, ততদিন অপর পক্ষ থেকে প্রতিরোধও চলবে। ফলে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা সহজে ফিরছে না জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সমাধান না হলে এই সংকট আরো তীব্র হতে পারে।বণিক বার্তা ডেস্ক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *