অনলাইন ডেস্ক: ৩ থেকে ৫ শতাংশ খেলাপি ঋণ দেখানো ব্যাংকগুলো এখন গ্রাহকের টাকাই ফেরত দিতে পারছে না। ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশে উঠেছে কোনো কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ।
- ব্যাংকভেদে অনাদায়ী ঋণ ৪৩ থেকে ৮৫ শতাংশ হচ্ছে
- ২৮ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ব্যাপক বাড়ছে
নামে বেনামে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়া সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। আবার এসব খেলাপি ঋণ নানা কৌশলে নিয়মিত ঋণ হিসেবে দেখানো হতো। ফলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য ঢাকা পড়ে যেত। এভাবে কয়েকটি ব্যাংকের মূলধনে ঘুন ধরে গিয়েছিল। ৩ থেকে ৫ শতাংশ খেলাপি ঋণ দেখানো ব্যাংকগুলো এখন গ্রাহকের টাকাই ফেরত দিতে পারছে না। ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশে উঠেছে কোনো কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। বেশিরভাগ অর্থই মাফিয়ারা বের করে নেয়ায় অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে কিছু ব্যাংক। এদিকে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি দেশের ২৮টি ব্যাংক। অথচ ৩০ এপ্রিলের মধ্যে খেলাপি ঋণের বাস্তবচিত্র প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা ছিল। এমনি পরিস্থিতিতে বিশাল অঙ্কের মূলধন ঘাটতিতে সোসাইটি’র সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ আশ্বাস দেন। এ সময় সেখানে এক ভাবগাম্ভীর্য ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয় এবং জামায়াত আমির শহীদ পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর নেন। তিনি শহীদ পরিবারগুলোর বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চান ও তাদের নানা সমস্যা অত্যন্ত ধৈর্য ও মনোযোগ দিয়ে শোনেন। এ সময় তিনি শহীদ পরিবারের সদস্যদের সান্ত¡না দেন। তিনি তাদেরকে মহান রবের প্রতি ভরসা করে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন। তাদের সমস্যাগুলো কিভাবে দূর করা যায় সে ব্যাপারে তিনি তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভরসা করে তাদের সম্ভাব্য সব সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দেন। জামায়াতে ইসলামী সুখে-দুঃখে সবসময় তাদের পাশে থাকবে বলেও জানান তিনি।
এ সময় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা উপস্থিত ছিলেন। ‘জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- গোলাম রহমান (শহীদ নাফিসের বাবা), আবুল হাসান (শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভির বাবা), মো: মহিউদ্দিন (শহীদ ইয়ামিনের বাবা), রবিউল আউয়াল ভূঁইয়া (শহীদ ইমাম হাসান তায়িমের ভাই), শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, (শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা), নাসির উদ্দিন (শহীদ আহনাফের আব্বা), মো: কবির হোসেন (শহীদ যাবির ইব্রাহীমের বাবা), কামাল হাওলাদার (শহীদ সিফাতের বাবা), সেলিম মাহমুদ (শহীদ সজলের ভাই), রাহাত হোসাইন (শহীদ রোহানের ভাই), আব্দুল্লাহ আল রইস (শহীদ মিরাজের ভাই), হোসেন আলী হাসান (শহীদ আরাফাতের ভাই), সোলাইমান (শহীদ মো: আতিকুর রহমানের ভাই), মো: অনিক (শহীদ মো: স্বজনের ভাই) প্রমুখ।
ছাত্রদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে উত্তরায় বিশাল মিছিল-সমাবেশ : যে কারণে আজ থেকে ৮৫ বছর আগে হিটলারের দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, ঠিক একই কারণে বহু আগেই ফ্যাসিবাদী-বাকশালীদের নিষিদ্ধ করা সম্ভব ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
গতকাল রাজধানীর উত্তরায় শহীদ মীর মুগ্ধ চত্বরে নাগরিক উন্নয়ন ফোরাম ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে মিছিলপরবর্তী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। ফোরামের উত্তরা অঞ্চল পরিচালক জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম খলিলের সঞ্চালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি মুহিব্বুল্লাহ, মাহবুবুল আলম মুকুল, মাজহারুল ইসলাম, আবু সাঈদ, আশরাফুল হক, মতিউর রহমান প্রমুখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলেও তারা জনগণের সাথে পুরোপুরি সুবিচার করতে পারেনি। মূলত, তারা জনগণের পালস বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত তারা কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা মহলের আনুকূল্য নিয়ে ক্ষমতায় আসেননি; বরং ছাত্র-জনতার ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। তাই তাদের কারো মুখের বা চোখের দিকে তাকালে চলবে না; বরং জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে নিজেদের করণীয় নির্ধারণ এবং কালবিলম্ব না করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের নিষিদ্ধ করে গণহত্যার দায়ে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
পদ্মা নদীর চর আলাতুলী অংশে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ গণমানুষের প্রাণের দাবি : সর্বনাশা পদ্মা নদীর চর আলাতুলী অংশে ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ গণমানুষের প্রাণের দাবি উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি জননেতা মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, এ বছরও চর আলাতুলীর প্রায় সাড়ে ৩০০ বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়েছে। পাশের নারায়ণপুর এলাকাও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ড ক্ষতি রোধে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে অভিভাবক ভূমিকায় দাঁড়াতেও দেখা যায় না। অনেকসময় দেখা যায়, সাংবাদিকরা এই তথ্যগুলো সেভাবে রাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরেন না। নদীর দুই পাড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে জনগণকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করে চর আলাতুলী ইউনিয়নবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চর আলাতুলী অংশে নদীর দুই পাড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রাণলয় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য এটি অনুমোদন দিয়েছে। দ্রুততম সময়ে কাজ শুরু করতে তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
গতকাল চর আলাতুলী অংশে নদীর দুই পাড় পরিদর্শন শেষে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর খোঁজখবর নিতে জনসাধারণের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা নায়েবে আমির ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু বক্কর, সদর উপজেলা আমির হাফেজ আব্দুল আলীম, নায়েবে আমির মোহাম্মদ দুরুল হুদা, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সদর উপজেলা শাখার সভাপতি ফরহাদ আহমেদ সায়িম, সদর উপজেলা যুব বিভাগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ রানাসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মাওলানা নিজামীর অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নের আহ্বান : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেমে দ্বীন, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অবদানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বাংলাদেশের জনগণের কাছে অতি পরিচিত একটি নাম, একজন আলেমে দ্বীন ও ইসলামী চিন্তাবিদ। সততা, যোগ্যতা, উদারতা, বিনয় ও নম্রতা তাকে অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। তিনি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ইসলামী কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জোরালো ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি তার নিজ এলাকা থেকে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদে তার গঠনমূলক ভূমিকা জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় সংসদে তার বক্তব্য ছিল দিক-নির্দেশনামূলক। তিনি অনেকগুলো মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন- যা মানুষের আত্মগঠন, পরিবার ও সমাজ গঠনে আলোর দিশা দিবে। দেশে-বিদেশে অসংখ্য সেমিনার, সভা ও সমাবেশে তাঁর দাওয়াতি বক্তব্য মানুষের চিন্তার জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ২০১৬ সালের ১০ মে রাত ১২টা ১০ মিনিটে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, আমি সাবেক আমিরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অবদানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করছি তিনি তার শাহাদাতকে কবুল করুন এবং তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করুন।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশকে একটি ইসলামী কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনে শরীক হওয়ার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।