আনলাইন ডেস্ক: প্রকৃতির সবকিছু সৃষ্টিকর্তার আইন মেনে চলে। মানুষের শারীরবৃত্তীয় কর্মকাণ্ডও তার ব্যতিক্রম নয়। পবিত্র কুরআন মজিদে আল্লাহ বলেছেন, “তিনিই তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণ, নিদ্রাকে করেছেন আরামপ্রদ আর দিনকে করেছেন আবার জীবন্ত হয়ে উঠার সময়।” (সূরা আল ফুরকান, আয়াত ৪৭)
“তিনিই তাঁর রহমাতের দ্বারা তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন দিন ও রাত, যাতে তোমরা বিশ্রাম গ্রহণ কর এবং তাঁর অনুগ্রহ তালাশ কর, এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (সূরা আল কাসাস, আয়াত ৭৩)
অনেকে অহেতুক রাত জেগে দেরি করে ঘুমাতে যান, তারা ঘুমের বহুবিধ উপকার থেকে বঞ্চিত হন। ঘুমাতে যাবার সঠিক সময় হল রাত ১০টা থেকে এগারটার মধ্যে। এ সময় থেকে রাত ২টা বা তিনটা পর্যন্ত সময়ের গভীর ঘুমকে ডেল্টা স্লিপ বলে। এই ঘুমে শরীর ফুল রিল্যাক্সে থাকে। কোষ ও টিস্যু রিজেনারেশন এবং গ্রোথের মাধ্যমে শরীরের ক্ষয় পূরণ হয়। ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়। ডিপ স্লিপ বা ডেল্টা স্লিপ আপনার ঘুমের কোয়ালিটি নির্ধারণ করে।
অন্যদিকে, এই ঘুম যদি কেউ না পায় তাহলে বাকি ২৪ ঘন্টায় ২০ ঘন্টা ঘুমালেও ঘুমের আসল তৃপ্তি পাওয়া যায় না।
আর ডেল্টা স্লিপ না পাওয়ার ফলে ব্রেনের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া শুরু করে।পড়তে, খেতে এবং যেকোনো কাজ করতে আলসেমি অনূভুত হয়।
তিনি সঠিকভাবে ব্রেকফাস্ট করেন না। ফুড সার্কেল নষ্ট হয়। তাঁর সারা দিনের কাজের সিস্টেমে গোলযোগ হয়। সূর্যের আলোর মাধ্যমে ভিটামিন ডি থেকে বঞ্চিত হন। শুধু তা–ই নয়, ভিটামিন এ, ই থেকেও বঞ্চিত হন। দিনে ঘুমিয়ে রাত জাগলে মুখের টোনিং নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ডার্ক সার্কেল পড়তে পারে। মানসিক অবসাদে ভুগতে পারেন। ওজন বাড়তে পারে। তা ছাড়া রাতে ঘুমের যেমন পরিবেশ, দিনে অনেক ক্ষেত্রেই সেটি পাওয়া যায় না। তাই দিনের ঘুম রাতের মতো গভীর হয় না। ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা, রাতে দিনের মতো হাঁটাচলা হয় না। কিন্তু জাংক ফুড, ইরিটেটিং ফুড খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এসব কারণে রাতের ঘুমই সেরা। দিনে ঘুমানো মন্দের ভালো।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত সঠিক মাত্রায় ঘুম না হলে একজন মানুষ ক্রমাগত শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। এর ফলে একটি সুন্দর জীবনও বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর স্লিপ রিসার্চ, লস এঞ্জেলেসের গবেষক জেরোম সিগেল বলেছেন, ‘যারা রাতের বেলা পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে পারে না তাদের জন্য দিনের ঘুম মনোসংযোগ এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
মানবজীবনে সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। ঘুম শরীরকে পুনর্জীবিত করার পাশাপাশি পরবর্তী দিনের কাজের জন্য আমাদের প্রস্তুত করে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনের বেলার ঘুমের অভ্যাসে হতে পারে চরম ক্ষতি। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টাই ঘুমিয়ে কাটান তাদের সাবধান হওয়া উচিত। কারণ ঘুমের সময় আমাদের শরীরে কোনো মুভমেন্ট হয় না। এ অবস্থায় শরীর বেশি সময় থাকার কারণে শরীরে মেদের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে।
রাতে নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের পাশাপাশি দিনের বেলাতেও যদি ঘুমের অভ্যাস থাকে তাতে শরীরে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এতে ঘুমের পরিমাণও বেড়ে যায়। আর বেশি পরিমাণ ঘুমের কারণে আমাদের যেসব রোগের ঝুঁকি রয়েছে তাহলো টাইপ টু ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, স্থূলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ব্যাক পেইন ইত্যাদি।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে, সকালের সময়টাতে শরীর সক্রিয় থাকে সব থেকে বেশি। আর খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে দুপুরের খাবার হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই দুপুরের খাবার গ্রহণের পর যদি ঘুমের অভ্যাস থাকে তবে ধীরে ধীরে আপনার মধ্যে দেখা দেবে পেটে গ্যাসের সমস্যা, চর্মরোগ, বমিভাব, স্থূলতা।
ন্যাচারোপ্যাথি বিশেষজ্ঞ ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের মতে, দিবানিদ্রা হজমশক্তি মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। কমিয়ে দিতে পারে স্মৃতিশক্তি। বাড়াতে পারে চর্মরোগ, হার্টের রোগ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা বলছেন, ভরপেট খাওয়ার পর দুপুরের ঘুমে পাকস্থলী ঠিকমতো নড়াচড়া করতে না পারায় বুক জ্বালাপোড়া এবং গলা জ্বলার মতো অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: ময়দা বা আটা নয়, যে রুটিতে লুকিয়ে সুস্বাস্থ্যের চাবি!
তাই দিনের বেলা ঘুমের অভ্যাস বাদ দেওয়ার পক্ষে বিশেষজ্ঞরা। তবে কাজের গতি বৃদ্ধিতে ১০ মিনিটের হালকা বিশ্রাম নেওয়া যেতে বলে মনে করছেন তারা।
শরীরের জন্য ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেউ কেউ দিনেও ঘুমায়। গরমের সময় এই অভ্যাস বেশি দেখা যায়। অনেকেই দিনের বেলা একটু সময় পেলেই- বিরতি নিয়ে ঘুমাতে যায়। দিনের বেলা ঘুমানো ভাল না খারাপ তা নিয়ে অনেকেরই অনেক মত আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিগহাম এবং উইম্যান হাসপাতালের গবেষকদের একটি দল সম্প্রতি স্পেনের মুরসিয়াতে ৩ হাজার ২৭৫ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে একটি গবেষণা চালিয়েছে। এতে স্থূলতা এবং মেটাবলিক সিনড্রোমের সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন তারা।
গবেষণায় দেখা গেছে, রাতের ঘুম আর দিনের ঘুমের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। শরীরের বিপাকীয় কাজে প্রভাব ফেলে দিনের বেলায় ঘুমের অভ্যাস। বেশি ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর- এমনটাই মনে করছেন গবেষকরা। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যারা দিনে ৩০ মিনিটের বেশি ঘুমান তাদের স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি যারা দিনে ঘুমায় না তাদের তুলনায় বেশি। এছাড়াও কখন খাবার খান এবং ধূমপান করেন কি না এ বিষয়গুলোও রয়েছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যারা অল্প সময়ের জন্য ঘুমান, অর্থাৎ পাওয়ার ন্যাপ নেন, তাদের দেহে একাধিক পরিবর্তনও ঘটে। একেবারে না ঘুমও যেমন খারাপ, তেমন দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুমও খারাপ। এতে রক্তচাপ বৃদ্ধির ঝুঁকিও থাকে।
গবেষণায় এটি স্পষ্টভাবে দেখা গেছে,দিনের ঘুমের দৈর্ঘ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষমতা ঠিক রাখতে এবং ভালো স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য পাওয়ার ন্যাপ খারাপ নয়। তবে দুপুরের খাবারের পরই যদি একটা লম্বা ঘুম দেন, তাহলে তা মোটেও শরীরের জন্য ভালো নয়।