আবু সাঈদ দেওয়ান সৌরভ, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদীম পৌরসভার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত মিরকাদীম-রিকাবী বাজার জিসি রোডে প্রায় ৪ কোটি ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ১শ ৫৮ টাকা ব্যয়ে ৪২ মিটার দীর্ঘ সেতুর প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ সাত মাস পেরিয়ে গেলেও অগ্রগতি হয়েছে মাত্র দশ শতাংশ কাজের। প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের জুন মাসে ব্রিজের কাজ সম্পূর্ণ করে যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত করার কথা ছিলো। কাজের ধীর গতির কারণে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের ব্যবসায়ীরা ও ভোগন্তির শিকার মিরকাদীম পৌরসভার প্রায় আশি শতাংশ সাধারণ মানুষ এবং আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। মিরকাদীম পৌরসভার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসনিক কার্যক্রম, অর্থনৈতিক, যাতায়াত ব্যবস্থা এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এই ব্রিজ। মিরকাদীম পৌরসভার প্রশাসনিক কার্যক্রম, শহিদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, মুন্সীগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, রিকাবী বাজার দারুল উলুম মাদ্রাসার পাঠদান সেবা, রিকাবী বাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, রিকাবী বাজার ইউনিয়ন ভূমি অফিস, কমলা ঘাট বন্দর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমূহ ও মিরকাদীম ফায়ার সার্ভিস, মিরকাদীমি মাছ ঘাট, লঞ্চ ঘাট, পল্লী বিদুৎ পাওয়ার গ্রিড অফিস, বিটিসিএল অফিস, কাঠ পট্টি গুদারা ঘাট, কাঠ পট্টি নতুন ও পুরাতন কাঠ ব্যবসায়ী এবং আশপাশের এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য যাতায়াতের সহজ ও অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ এই ব্রিজটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীর গতি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকির অভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও কাজের অগ্রগতি মাত্র দশ শতাংশ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রকৌশলী টেলিফোন লাইনের কাজের দোহাই দিলেও, খবর নিয়ে জানা গেছে টেলিফোনের লাইনের কাজ শেষ হয়েছে গত বছরের জুন মাসে। এ সাত মাসে কাজের কোন অগ্রগতিই হয়নি। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এখনো পুরনো ব্রিজের পাইলিং ভাংগার কাজ করছে মাত্র দুইজন শ্রমিক। এছাড়াও আশপাশের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে সমস্যার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন যারা কাজ করে তারা মাত্র ৫-৭ দিন যাবৎ নতুন করে কাজে আসছে। এভাবে কাজ চলতে থাকলে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যেও এই ব্রিজের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভবনা নাই।
এই বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একজন ছাত্র জানায়, আমার বাড়ি রামপাল ইউনিয়নে, সেখান থেকে আমি নিয়মিতই এই রাস্তায় যাতায়াত করি। এই ব্রিজটি বন্ধ থাকার কারণে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে বেশি টাকা খরচ হয় ও সময় বেশি লাগে।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা একজন বয়ষ্ক নারী জানান, নানা সমস্যার কারণে কয়েক দিন পর পর এখানে আসতে হয়। ব্রিজটি বন্ধ থাকার কারণে রিকাবী বাজারের ভিতর দিয়ে আসতে হয়। বাজার অনেক ব্যস্ত থাকার কারণে যাতায়াতে অনেক ঝুকি থাকে। আবার সময়ও বেশি লাগে।
রিকাবী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও পুরান কাঠপট্টি ব্যবসায়ী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল হোসেন জানান, এই ব্রিজটির উপর কমলা ঘাট, মিরকাদীম মাছের আড়ৎ এবং আমাদের পুরান ও নতুন কাঠপট্টি ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক জরুরী রাস্তা। এই বিজ্রটির জন্য আমরা অনেক বেশি আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আবার ব্যবসায়ী কাজে অনেক ভোগান্তির শিকার হচ্ছি আমরা ও ক্রেতারা। দ্রুত এই বিজ্রটির কাজ শেষ না হলে আমাদের ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে। দ্রুত কাজ শেষ না হলে অনেক ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা দেওলিয়া হয়ে যাবে।
দশ শতাংশ কাজের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সেতুর কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আফরা কপোর্রেশন এর সাইট ইঞ্জিনিয়ার রাসেদ জানান, আপনি মিথ্যা বলছেন, সেতুর ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
এই সেতুর তত্বাবধানে থাকা মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার উপ-সহকারি প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোঃ রাকীব হোসেন জানান, সেতুর কাজ ২৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। টেলিফোন লাইনের কাজ শেষ হতে অনেক দেরি হয়েছে। তাছাড়া জায়গাটা খনন প্রক্রিয়ার সময় পানির সমস্যার কারণে কাজে একটু ধীর গতি হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরো সময় চেয়েছে। তবে এই বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা করি।
এই বিষয়ে একই বিভাগের আরেকজন প্রকোশলী মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান, টেলিফোনের লাইন ও পল্লি বিদুৎ অফিসের কাজের কারণে এবং গত বছর পশুর হাটের কারণে ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে দেরি করে। তাছাড়া ফান্ড সমস্যার কারণে কাজ শুরু হয়েছে অনেক দেরি করে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সঠি তদারকির মাধ্যমে মিরকাদীম পৌরসভার প্রশাসনিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তি সহজকরণ ও ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির সম্ভবনার হাত থেকে রক্ষা করতে এবং সাধারণ মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমাতে দ্রুত এই সেতুর কাজ সম্পুর্ণ করে, জন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করবে এমনটাই প্রত্যাশা।