জামালউদ্দিন বারী:ঢাকার ডাক ,ক্ষমতাদর্পী অপরাধীদের যতই বাড়–বাড়ন্ত হোক, গণমানুষের কাছে তাদের কর্মকান্ডের চালচিত্র একসময় বদলে দিতে পারে। ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে শোষক আর শোষিতের মধ্যেও একটা পালাবদল ঘটে যেতে দেখা যায় । কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতার বাইরেও একটি সার্বজনীন ক্ষমতার ভরকেন্দ্র থাকতে পারে, যা কিনা রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ছাড়াই যেকোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠিগত ক্ষমতার সব দৃশ্যপট বদলে দিতে পারে। আজকের বিশ্ব এবং বাংলাদেশের দিকে তাকালে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রের সেই প্রতিচ্ছবি উঠে আসতে দেখা যায়। মধ্যপ্রাচ্যের অপরাজেয় শক্তি ইসরাইলের ফ্যাসিবাদী নেতা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কোর্ট অব জাস্টিসের রুলিং এবং রাফায় যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশ থেকে এটাই প্রতিয়মান হচ্ছে যে, কোটি কোটি মানুষের সমর্থন ও প্রতিক্রিয়া সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তির সমর্থনের চেয়ে বেশি শক্তিশালী ক্ষমতাদর্শি অত্যাচারির বিরুদ্ধে হঠাৎ কেউ সাহস নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে অসংখ্য মানুষ তার পাশে দাঁড়িয়ে যায়। এভাবেই জুলুমবাজ অপশক্তির পতন নিশ্চিত হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ তুলে প্রথমে সাহস করে মামলা ঠুকেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তারপর একের পর এক বেষ কিছু দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে সমর্থন জানিয়ে আদালতের কর্মকান্ডে সামিল হয়েছে। অবশেষে এসেছে সেই কাক্সিক্ষত দিন। অনেক দিন ধরেই ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইসিজের গ্রেফতারি পরোয়ানার আতঙ্ক ভর করেছিল। অবশেষে গত ২৪ মে আইসিজের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের রায়ে অবিলম্বে রাফায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান ও গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ জারি করা হয়েছে। তবে ইসরাইল আন্তর্জাতিক আদালতের এই রায়কে কোনো পাত্তা না দিয়ে রাফায় অভিযান জোরদার করে রাফা ও জাবালিয়ায় আরো বেশকিছু বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে আরো অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষকে হতাহত করে বিশ্বকে এই বার্তা দিয়েছে যে, তারা এসব বিশ্বজনমত কিংবা আন্তর্জাতিক আদালতের কোনো পরোয়া করেনা। হামাস নির্মূলের নামে ফিলিস্তিনি আরব জনগোষ্ঠিকে নির্মূল করার নীলনকশা বাস্তবায়নে তাদের সহযোগী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধ বিরতির প্রশ্নে মার্কিন প্রশাসন কখনো কখনো বাহ্যিকভাবে ইসরাইলের সাথে দ্বিমত কিংবা চাপ প্রয়োগের ভান করলেও আদতে তা একটা কপটাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সমর্থন শত শত কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা জায়নবাদী ইসরাইলের ঔদ্ধত্য ও গণহত্যার উন্মত্ততার অগ্নিতে ঘৃত সঞ্চার করলেও শেষ রক্ষা হবে কি না তা নিয়ে নিজেরাই এখন সংশয়ের দোলাচলে দুলতে শুরু করেছে। ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান সেনা–গোয়েন্দা কর্মকর্তা, সামরিক বিশ্লেষকদের অনেকেই হামাস–হিজুবল্লাহর তুলনায় ইসরাইলের সামরিক কৌশলের পশ্চাৎপদতা ও পরাজয়ের চিত্র তুলে ধরেছেন। ইউরোপের তিনটি দেশ আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও স্পেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকে সমর্থন জানিয়েছে। হামাসের আল কাসসাম ব্রিগেডের অপারেশন আল আকসা ফান্ডের পর ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব হামাসকে বিশ্বের কাছে একটি ঘৃণ্য সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে হাজির করে তাদের নির্মূল করে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতার দাবিকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। যুদ্ধের ৮ মাস পেরিয়ে তারা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কোনো দিকেই সাফল্য দেখাতে পারেনি। উপরন্তু পশ্চিমা বিশ্বের নতুন প্রজন্ম এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিন পন্থী আন্দোলন দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে। তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। এই পৌরাণিক বাক্যবন্ধের প্রতিফলন সমাজে, রাষ্ট্রে ও রাজনীতিতে হরহামেশা দেখা যায়। ক্ষমতাদর্শিদের দুর্নীতি, অনাচার, অবিচার ও কুকর্মের মাত্রা ভেতর থেকে তাদের নির্মম পতন ও ধ্বংসের বিস্ফোরণ অনিবার্য করে তোলে । এবং তাদের নিমর্ম মৃত্যুও মানুষের মধ্যে কোনো করুণা জাগায়না। গত সপ্তাহে বাংলাদেশে তিনজন প্রভাবশালী ব্যক্তির আমলনামা নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। এদের একজন দেশের সাবেক সেনা প্রধান, একজন সাবেক পুলিশ ও র্যাব প্রধান এবং একজন সংসদ সদস্য। অবসরপ্রাপ্ত সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বিজিবি প্রধান ও সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে বিদেশে অবস্থানরত তার মাফিয়া ভাইদের নানাবিধ অপকর্মের ফিরিস্তি নিয়ে আল জাজিরা টেলিভিশনে অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন শিরোনামে একটি ডক্যুমেন্টারি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সরকারের সর্বোচ্চ মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় কিভাবে আজিজ আহমেদের তিন ভাই দেশে মাফিয়া চক্র গড়ে তোলে এবং বিদেশে বসে অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। সামরিক বাহিনীর পদে থেকে নিজ ভাইদের কন্ট্রাক্ট পাইয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকার কোম্পানির মালিক বানিয়ে অবসরের পর নিজেও সে কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়ে ইউ
আমেরিকায় ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনার কথা আল জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট জেনারেল আজিজ আহমেদের কণ্ঠে তুলে এনেছিলেন। আল জাজিরার প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার তিন বছর পর ২০২৪ সালের মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির ঘোষণা প্রকাশ করে। এর মধ্য দিয়ে অবসরের পর জেনারেল আজিজের ইউরোপ–আমেরিকায় ঘুরে বেড়ানোর খায়েশ ও পরিকল্পনায় প্রথম প্রতিবন্ধক বলে ধরে নেয়া যায়। শুধু তাই নয়, সাবেক সেনা প্রধানের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে বর্তমান সরকারের উপর মার্কিন নীতির সুস্পষ্ট ইঙ্গিতবহ বলে মনে করছেন অনেকে। সাবেক র্যাব ও পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদেরে বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুলিশ প্রধান হিসেবে তার দায়িত্ব পালনে তেমন কোনো প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণের পর দেশীয় গণমাধ্যমে বেনজির আহমেদের অগাধ বিত্ত– বৈভবকে আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার সাথে তুলনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিদেশি নিষেধাজ্ঞায় কাজ না হলেও দেশের অভ্যন্তরে ক্ষমতার অন্দরমহলে অস্বচ্ছ কি যেন ঘটে যাওয়ার আলামত পাওয়া যাচ্ছে বেনজির আহমদের সম্পদ ও দুর্নীতির তথ্য নিয়ে আলোড়ন ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ধারাবাহিক তৎপরতা থেকে। কারণ, বেনজিরের মত আরো অনেক রাঘব বোয়াল সমাজে ও রাজনীতিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যারা দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশে–বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদেরকে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের যেন কোনো মাথাব্যথা নই। এর মানে হচ্ছে, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নায়ে কখন, কাকে, কিভাবে জবাবদিহিতা বা শাস্তির আওতায় আনা হবে তার হনেও ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কাজ করে। বাংলাদেশের দুর্নীতি মন কমিশন এবং মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নিজ নিজ স্বার্থ, রাজনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থানের ভূমিকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা এক চরম সন্ধিক্ষণেএসে দাঁড়িয়েছে। এর পেছনে হয়েছে রাষ্ট্রশক্তির অমিত অপব্যবহার ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি । গত ১৫ বছরে সামাজিক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে একটি জন্য একদলীয় ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক ব্যবস্থা একটি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থায় পরিনত হয়ে রাজনীতি জনপ্রতিনিধিত্বের আড়ালে একটি মাফিয়াতন্ত্র তার দন্ত–নখড় বিস্তার করেছে । জনারেল আজিজের ভাইদের অপরাধ জগতের সাথে রাষ্ট্রশক্তি একাকার হয়ে ডার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কমিটমেন্ট পশ্চিমা তান্ত্রিক বিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। প্রবল একচ্ছত্র রাজনৈতিক শক্তি কেন বহুধাবিভক্ত ব্যক্তিকেন্দ্ৰিক মাফিয়া তান্ত্রিকব্যবস্থার কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে, এখন রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাও হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ব্যক্তিগত সম্পদ ক্ষমতার দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হতে শুরু করে। জেনারেল আজিজ সাহমেদ, বেনজির আহমেদ কিংবা আনোয়ারুল আজীমের মত ব্যক্তিদের শেষ প্রিনতি বলে দেয়, কেউই বিচারের উর্দ্ধে নয়। সময় ঠিকই সবকিছুর হিসাব ও কারের ভার গ্রহণ করে থাকে। ঝিনাইদহ জেলার একটি সংসদীয় আসনের এবারের এমপি আনোয়ারুল আজিম জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি
ছিলেনএমন দাবী ধোপে টেকে না। কারণ বাংলাদেশে গত তিনটি সংসদ নির্বাচনের কোনোটি অংশগ্রহণমূলক, অন্তভুক্তিমূলক কিংবা গণতান্ত্রিক নির্বাচনী মানদন্ডে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছিলনা। একতরফা নির্বাচনে শতকরা ৮০ ভাগের বেশি মানুষ ভোট দিতে যায়নি। যদিও ভোটের দিনের টার্নওভার বা অংশগ্রহণই গণতন্ত্রের শেষ কথা নয়। মানবাধিকার, স্বাধীন গণমাধ্যম, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা ছাড়া গণতন্ত্র অর্থবহ হতে পারেনা। আইন প্রণেতা হয়ে আইনের যথেচ্ছ লঙ্ঘন, জনগণের সম্পদ লন্ঠন, অবৈধ মাদক কারবার, সোনা চোরাচালানি, হুন্ডি ব্যবসা, ভূমি দস্যুতা যদি আইন প্রণেতাদের রাতারাতি টাকার কুমিরে পরিনত হওয়ার বল্গাহীন প্রতিযোগিতার বিষয় হয়, তবে আইনের শাসন কখনোই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। অখ্যাত উঠতি ব্যবসায়ী থেকে হঠাৎ সংসদ নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন লাভ ও বিনা ভোটে পাস করার পর নির্বাচনী এলাকার একচ্ছত্র মালিক–মোক্তার বনে যাওয়া, প্রতিটি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ নিজ ইচ্ছামত ঠিকাদারি বন্টন, যথেচ্ছ কমিশন আদায়, লাল পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচারের মত কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিবিদ, আমলা ও প্রিভিলেজ পাওয়া ব্যবসায়ীরা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে এসেও আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ যেন তার গন্তব্য হারিয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা, ইসলামের ধর্মীয়–নৈতিক মূল্যবোধ এবং চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিল। গত দেড় দশকে বাংলাদেশে কঠোর হস্তে বিরোধীদলন্ডমত দমনের কলা– কৌশল, একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনকে বৈধতা দেয়ার পেছনের মূল শক্তি ছিল ভারত। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তকমাধারি দেশটি নিজের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে তুলতে তার ভূরাজনৈতিক প্রভাব ও সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রয়াস কাজে লাগিয়েছে। তারা দেশের ৯০ভাগ মানুষের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা ও আকাঙ্খার কথা অগ্রাহ্য করে, বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক ক্রীড়নক শক্তি গড়ে তুলতেই সব সময় সচেষ্ট থেকেছে। ভারতের আম আদমি পার্টির নেতা, দিল্লীর মূখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল পাঞ্জাবের একটি নির্বাচনী জনসভায় বলেন, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত একনায়কতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে বলেছেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা দেশের বিরোধীদের জেলে পুরে ভোটে জিতে ক্ষমতা দখল করেছেন । একইভাবে পাকিস্তানেও ইমরান খানকে জেলে পুরে সেনাসমর্থিতরা ক্ষমতা দখল করেছেন। রাশিয়ায় ভ্লাদিমির পুতিনও বিরোধী মত রুদ্ধ করে বিপুল ভোটে জয়লাভের উদাহরণ তুলে ধরেছেন কেজরিওয়াল। জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খাকে দীর্ঘদিন দাবিয়ে রাখার ফল কখনো শুভ হয়না । কোনো ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অপূর্ণ থাকে না । গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রশক্তি দিয়ে রুদ্ধ করা হলে ভেতরে ভেতরে অদৃশ্য একটি তৃতীয় শক্তির প্রভাব বাড়তে থাকে। সম্প্রতি একটি টকশোতে সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশে সরকারের চেয়েও শক্তিশালী একটি গোষ্ঠির জন্ম হয়েছে। মূলত কালোটাকার অর্থনীতিকে ভর করে সৃষ্টি হওয়া মুনাফাবাজ গোষ্ঠির নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যবসা–বাণিজ্য, পুঁজি বাজার ও ব্যাংকিং সেক্টরের উপর তাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ সরকারের নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করছে। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, অর্থপাচার ও ডলারের সংকট নিরসনে সরকারের উদ্যোগগুলো তেমন কোনো কাজে না আসার পেছনে সেই রাষ্ট্রাতিক শক্তির প্রভাবকে দায়ী করা যায়। বেনজির আহমেদ, জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ এক সময় সরকারের ক্রীড়নকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। রাষ্ট্রশক্তিকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারের বেপরোয়া তৎপরতার সুযোগ নিয়ে তারা ব্যক্তিগত–পারিবারিক স্বার্থ হাসিলে লিপ্ত হয়েছিলেন। অবৈধ সম্পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনাগুলোকে ইমিউনিটি দেয়া সরকারের পক্ষে সব সময় সম্ভব হয়না। এরাই দেশের দুর্নীতির বরপুত্র কিংবা অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে তোলার মূল হোতা নন। তবে সেনাপ্রধান ও পুলিশ প্রধানের মত পদে থেকে ধরাকে সরা জ্ঞান করার প্রবণতা আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ধ্বংসাত্মক। এখন যারা চেয়ারে বসে সবকিছুকে ক্ষমতার চশমায় দেখছেন, তাদের জন্য বেনজির আহমেদ, আজিজ আহমেদ এবং আনোয়ারুল আজীমের পরিনতি একটি তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়েছে। তারা শুধরে গেলে রাষ্ট্রে, সমাজে, রাজনীতিতে ও শাসনে ইতিবাচক পরিবর্তন শুরু হতে পারে ।