হরগঙ্গা কলেজে কোচিংয়ের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়
কাজী বিপ্লব হাসান:মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি হরগঙ্গা কলেজে কোচিংয়ের নামে এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ২০২২—২৩ শিক্ষাবর্ষের এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থীদের কোচিং করানোর নাম করে বাধ্যতামূলকভাবে প্রায় প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী থেকে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। ফরম ফিলাপের হিসাব অনুযায়ী মানবিক বিভাগে ২২৩০টাকা, ব্যবসায় শাখায় ২২৩০ টাকা এবং বিজ্ঞান শাখায় ২৭৯০টাকা বোর্ড থেকে নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এই নির্দেশনাকে অমান্য করে কোচিংয়ের জন্য প্রায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলকভাবে ১ হাজার টাকা, ডাটা এন্টির জন্য ১৫০টাকা ও অনুপস্থিতির জন্য ৩০টাকা অতিরিক্ত টাকা প্রদান করতে হচ্ছে। সে হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৫’শ শিক্ষার্থী থেকে ১৭ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। এ অর্থ কোন খাতে জমা হবে তার কোন সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা নেই।
শিক্ষার্থীরা জানায়, আমরা এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী। আমাদের ফরম ফিলাপের সাথে কোচিং বাবদ অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা, ডাটা এন্টি ফি ১৫০টাকা ও ক্লাসে অনুপস্থিতির জরিমানা ৩০টাকা বাধ্যতামূলকভাবে প্রায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন বকাঝকা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। আমরা পরীক্ষার আগে বাড়িতে নিয়মিত পড়াশোনা করে ভালোভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করব। কিন্তু সে বিষয়টি না করে আমাদেরকে বাধ্যতামূলক কোচিং করার জন্য কলেজে যেতে হবে। পরীক্ষার আগে এটি আমাদের অতিরিক্ত মানসিক চাপ। এছাড়াও কোচিংয়ের প্রতি আমাদের কোন আগ্রহও নাই। সারা বছর আমাদেরকে ঠিকমতো ক্লাস করানো হয়নি। দুই মাস কোচিং করিয়ে আমাদের কি লাভ হবে? কোচিং চালু করলেও কয়েকদিন চলার পরে তা আবার বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, সরকারি হরগঙ্গা কলেজে মুন্সীগঞ্জ জেলা ও অন্যান্য জেলার শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হয়েছেন। স্যাররা নিজেরাই অভিভাবকের সম্মত্তি ফরম তৈরী করে জমা রেখেছেন। আমাদের অধিকাংশের অভিভাবকগণ তা জানে না।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, ফরম পূরণের সময় কোচিংয়ের অর্থ আদায় করার পর কয়েকদিন কোচিং করানোর পর তা বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, সরকারি হরগঙ্গা কলেজে একাদশ, দ্বাদশ, অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। প্রত্যেকটি কোর্সে ক্লাস নেওয়ার জন্য শিক্ষক সংকট রয়েছে। ফলে নিয়মিত কোন ক্লাস করানো সম্ভব হয় না। এছাড়াও কলেজটি সরকারি হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও নিয়মিত ক্লাসে আসে না। সেই সুযোগে শিক্ষকগণও ক্লাস না নেওয়ার একটি অজুহাত দিয়ে পার পেয়ে যান।
এ বিষয়ে সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সুভাষ চন্দ্র হীরা স্যার বলেন, হরগঙ্গা কলেজে কোচিং নীতিমালা—২০১২ অনুসরণ করেই প্রতিষ্ঠানে কোচিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যে সকল শিক্ষার্থী আগ্রহী তাদেরকে আমরা কোচিং করাবো। কোচিংয়ের জন্য ১হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তা থেকে শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও বিভিন্ন মডেল টেস্ট নেওয়া হবে। কলেজের ফলাফল ভালো করার জন্যই এ উদ্যোগ। যে সকল শিক্ষার্থীর আর্থিক অবস্থা দুর্বল তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফি মওকুফ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ আমাদের ডিজি র্যাংকের একজন কর্মকর্তা। বিষয়টি অবগত হওয়ার পর আমি ওনাকে ফোন করে বলেছি এমন কিছু কইরেন না যেটি দৃষ্টি কটু দেখায়। তিনি আরো বলেন, এরকম ইস্যুতে তাদেরকেই তো তদন্তে পাঠানো হয়। সেক্ষেত্রে যদি তিনি এমনটি করেন তাহলে অন্যরা কিভাবে সংশোধন হবে।