স্টাফ: মানবতার এমন কোনো সমস্যা নেই, যার বাস্তব সমাধান ইসলামে নেই ৷ ইসলামের দিকনির্দেশনাই সর্বোৎকৃষ্ট নির্দেশনা। বিবেক- বুদ্ধির রকেট উড়ে দিগ্বিদিক ঘুরে এসে যেখানে গিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হয়, তা হলো ইসলাম । বর্তমান বিশ্বে একটি সমস্যা ক্রমাগত বেড়ে চলছে, তা হলো নারী-পুরুষের অবৈধ মিলনের ফলে যে সন্তান জন্ম হয়, যাকে মার্জিত ভাষায় অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান বলে আখ্যা দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলে? ইসলামে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানের স্বীকৃতি, লালন-পালন ও ভবিষ্যতের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। নিম্নে আমরা কিঞ্চিৎ আলোচনা করার প্রয়াস পাব ।
সন্তানের বৈধতার ভিত্তি: শরিয়তে সন্তানের বৈধতার মূল ভিত্তি হলো স্বামী-স্ত্রীর বৈধ বিয়ে । বিয়ের সঙ্গে মানুষের বংশ-পরম্পরার সম্পর্কের উৎস নির্ধারিত হয়েছে। তাই অমুসলিমদের সন্তানও তাদের ধর্মমতে বৈধ বিয়ের মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করলে তাকেও বৈধ সন্তান আখ্যা দেওয়া হয়েছে। মুসলিমদের জন্যই শুধু ইসলামিক পদ্ধতিতে বৈধ বিয়ে হওয়া শর্ত, অমুসলিমদের জন্য ইসলামী পদ্ধতিতে বিয়ে জরুরি নয়। এখানে আমরা দেখতে পাই, ইসলামে মানবসন্তানের বংশ সংরক্ষণের প্রতি সবিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে যে অমুসলিমদের নিজ নিজ ধর্মীয় বিয়েকেও ইসলাম বৈধতার সনদ দেয়। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস ১৩২৭৩, রদ্দুল মুহতার : ৩/১৮৪) বিয়ের কমপক্ষে ছয় মাস পর বাচ্চা জন্ম নিলে তা ওই স্বামী-স্ত্রীর বৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য হবে। তাই বিয়ের ছয় মাস পর বাচ্চা জন্ম নিলে স্বামী ওই সন্তান অস্বীকার করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে তাদের মিলন হয়েছে কি না বা কখন হয়েছে, এর ইসাবের ওপর নির্ভর করা হয়নি। কেননা তা গাপনীয় ব্যাপার। (মাবসুতে সারাখসি : ৭/১৫৫) এমনকি বিয়ের পর যদি স্বামী ছাড়া ন্য কারো সঙ্গে স্ত্রীর অবৈধ মিলনে কোনো ্যান জন্ম হয়, ওই সন্তানের পিতৃত্বের সম্পর্কও । বৈধ স্বামীর সঙ্গেই হবে। ওই মহিলার স্বামীই নের বৈধ বাবা হবে, ব্যভিচারী নয়। এ ক্ষেত্রে ক অবৈধ সন্তান বলা যাবে না। হাদিস শরিফে ছে, ‘সন্তান বৈধ স্বামীরই গণ্য হবে, আর চারী বঞ্চিত হবে। (বুখারি, হাদিস : 5)
এখানেও আমরা দেখতে পাই, ইসলাম মানব- সন্তানের বংশ সংরক্ষণ ও তাকে অসম্মানের তিলক থেকে বাঁচাতে সর্বাধিক চেষ্টা করেছে। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো সম্ভাবনায় বৈধতা দেওয়া যায়, তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অতএব, কারো বৈধ স্বামী থাকলে ওই সন্তানকে বৈধতা দেওয়া হবে এবং ওই সন্তান বৈধ স্বামীর বলেই গণ্য হবে।
অবৈধ সন্তানের সাধারণ বিধান:
সাধারণত অবৈধ সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিপালন ও ধর্মবিষয়ক প্রায় অনেক বিধান বৈধ সন্তানের অনুরূপ। কেননা, এখানে সন্তানের কোনো দোষ নেই; বরং দোষ তার মা-বাবার, তাই তার বৈধ অধিকার ইসলামে সাব্যস্ত রয়েছে। তবে কিছু কিছু বিধানে সবার চেয়ে পার্থক্যও রয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত তথা অবৈধ সন্তানের বংশ মায়ের থেকে সাব্যস্ত হবে। যেহেতু বাবা অবৈধ, তাই অবৈধ বাবার সঙ্গে সম্পর্কিত হবে না। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘সন্তান বৈধ স্বামীরই গণ্য হবে, আর ব্যভিচারী বঞ্চিত হবে। হাদিস : ২০৫৩) (বুখারি,
সন্তানের ভরণ-পোষণ ও লালন-পালন: লালন- পালনের অধিকারী হবে সন্তানের মা। মায়ের পক্ষ সন্তানের ভরণ-পোষণ বহন করবে। অর্থাৎ তার মায়ের ভরণ-পোষণ যাঁর দায়িত্বে, তার ভরণ- পোষণও তিনিই দেবেন।
সন্তানের আকিকা: মায়ের পক্ষ সন্তানের আকিকা করবে। অর্থাৎ তার মায়ের ভরণ-পোষণ যাঁর দায়িত্বে, তার আকিকা তিনিই করবেন। তবে এসব সন্তানের আকিকার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা উত্তম, যাতে সন্তানের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ না হয়। (হাশিয়াতুশ শারবিনি আলা তুহফাতিল মুহতাজ : 3/311)
উত্তরাধিকারের বিধান: ওই সন্তানের বংশ যেহেতু মায়ের থেকে সাব্যস্ত, তাই সে মা ও মায়ের নিকটাত্মীয়দের উত্তরাধিকারী হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৬/৭৭৬)
অবৈধ সন্তানকে মুয়াজ্জিন বানানো: তাকে মুয়াজ্জিন বানানো বৈধ, তবে উপযুক্ত অন্য কেউ থাকা অবস্থায় তাকে মুয়াজ্জিন বানানো অনুত্তম । এর দুটি কারণ রয়েছে-এক. স্বাভাবিকভাবে সবার দৃষ্টিতে পবিত্র ও সম্মানিত ব্যক্তিকে মুয়াজ্জিন বানানো হয়। মানুষের দৃষ্টিতে ওই সব সন্তান যেহেতু একটু অন্য রকম মনে হয়, তাই এমন ইস
সন্তানকে মুয়াজ্জিন বানানো বৈধ হলেও মাকরুহ। এ ছাড়া হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত ও উত্তম ব্যক্তি যেন আজান দেয়। ‘ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫৯০) দ্বিতীয়ত, তাদের অভিভাবকত্বের ত্রুটির কারণে তারা বেশির ভাগই সুশিক্ষিত হয় না, তাই তাদের চেয়ে অন্যরা এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে। (মাবসুতে সারাখসি : ১/১৩৭-১৩৮, বাদায়েউস সানায়ে : ১/১৫0)
ইমাম বানানো : ইমামতির উপযুক্ত অন্য কেউ থাকা অবস্থায় তাকে ইমাম বানানো মাকরুহ, এ ক্ষেত্রে আগে উল্লিখিত দুটি কারণেই তাদের ইমামতি মাকরুহ। তবে যদি সে আলেম ও উপযুক্ত হয়, তখন তাকে ইমাম বানানো মাকরুহ নয়। (রদ্দুল মুহতার : ১/৫৬২) অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানের সাক্ষ্যদান: অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান যদি ন্যায়পরায়ণ হয়, তখন অন্যদের মতো তাদের সাক্ষীও ইসলামে গ্রহণযোগ্য। (তাবঈনুল হাক্বায়েক : ৪/২26)
অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানের ধর্ম: যদি অবৈধ শিশুসন্তানের মা-বাবা ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের হয়, তখন উভয়ের মধ্যে যার ধর্ম উৎকৃষ্ট হবে, সন্তান তারই ধর্তব্য হবে। যেহেতু শিশুসন্তান অবুঝ, তাই মা-বাবার মধ্যে যে উৎকৃষ্ট ধর্মাবলম্বী হবে, তারই অনুসারী হবে। অতএব, যদি মা-বাবার কোনো একজন মুসলিম হয়, অপরজন অমুসলিম হয়, তাহলে সন্তান মুসলিম ধর্তব্য হবে, চাই সে মা হোক বা বাবা। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘সব সন্তান স্বভাবধর্ম ইসলামের ওপর জন্মগ্রহণ করে; কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার মা-বাবার ভুল দীক্ষায় সে ইহুদি, খ্রিস্টান, অগ্নিপূজক ইত্যাদি হয়। ‘ (বুখারি, হাদিস : ১৩৫৮, রদ্দুল মুহতার : ৩/১৯৬) অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানকে ব্যভিচারী বলে গালি দেওয়া বৈধ নয়: অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানকে ব্যভিচারী বলে গালি দেওয়া বৈধ নয়। এমনকি কেউ যদি তাকে ব্যভিচারী বলে গালি দেয়, তাকে অপবাদ দেওয়ার শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। কেননা তার মা-বাবা অন্যায়কারী হলেও সে ওই অন্যায়ে অংশীদার নয়। (মাবসুতে সারাখসি : ৯/১২৭) মহান আল্লাহ বলেন, “কারো অন্যায়ের বোঝা অন্য ব্যক্তি বহন করবে না। (সুরা : আনআম, আয়াত : আয়াত ১৬৪)