স্টাফ: প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ যে কোনো সমস্যায় আল্লাহ্ তাআলার কাছে আশ্রয় লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হচ্ছে দোয়া এবং রোনাজারি করা। কেননা আল্লাহ্ তাআলা হলেন মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ আশ্রয়দাতা। তাছাড়া দোয়া ও রোনাজারি আল্লাহ্ তাআলার কাছে অতিপ্রিয় স্বতন্ত্র ইবাদতও বটে।
হাদিসে প্রবল বৃষ্টি ঝড়ো হাওয়া, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প এবং প্রবল বাতাসসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্ত থাকার অনেক দোয়া ও আমল বর্ণিত আছে। এ দোয়াগুলো পড়ে নিজের জন্য এবং ঘূর্ণিঝড়সহ সব দুর্যোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করা উচিত। বৃষ্টিসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে যে সব দোয়া পড়বেন তার কিছু তুলে ধরা হলো- বৃষ্টি দেখলে যে দোয়া পড়বেন উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন সারির মা ফিহি (বুখারি)
অর্থ : হে আল্লাহ্! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই, এ মেঘের মধ্যে যে অনিষ্ট রয়েছে তার থেকে। মেঘের গর্জনে পড়ার দোয়া হজরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং কুরআন মাজীদের এই আয়াত তিলাওয়াত করতেন-
سجان لبي العريج
‘সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রাদদু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি।’ (মুয়াত্তা)
অর্থ : ‘পাক-পবিত্র সেই মহান সত্তা- তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা, সভয়ে।’ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই এই দোয়া করতেন- উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগজাবিকা ওয়া লা তুলহিকনা বিআ’জাবিকা, ওয়া আ’ফিনা ক্ববলা জালিকা।’ (তিরমিজি) অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! তোমার ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আমাদের মেরে ফেলো না আর তোমার আযাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নিও।’ ঘূর্ণিঝড়ে পড়ার দোয়া বান্দার জন্য বাতাস আল্লাহ্ তাআলার অনেক বড় নেয়ামত। কারণ মানুষ বাতাস ছাড়া বাঁচতে পারে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা বাতাসকে গালি দিও না। তবে যদি তোমরা একে তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেখতে পাও, তবে এ দোয়া করবে- উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরি মা ফিহা ওয়া খাইরি মা উমিরাত বিহি, ওয়া নাউজুবিকা মিন শাররি হাজিহির রিহি ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উমিরাত বিহি’ (তিরমিজি, মিশকাত)
অর্থ : হে আল্লাহ্! আমরা তোমার নিকট এ বাতাসের ভালো দিক, এতে যে কল্যাণ রয়েছে তা এবং যে উদ্দেশ্যে তা নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে এসেছে তার উত্তম দিকটি প্রার্থনা করছি। এবং তোমার নিকট এর খারাপ দিক হতে, এতে যে অকল্যাণ রয়েছে তা হতে এবং এটা যে উদ্দেশ্যে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে এসেছে তার মন্দ দিক হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ঝড় তুফানে পড়ার দোয়া উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা।’ (বুখারি)
অর্থ : “হে আল্লাহ্! আমাদের থেকে ফিরিয়ে নাও, আমাদের ওপর দিয়ো না।’ উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্আলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা ফিহা-ওয়া খায়রা মা উরসিলাতবিহি; ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাতবিহি।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট এর মঙ্গল, এর মধ্যকার মঙ্গল ও যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার মঙ্গলসমূহ প্রার্থনা করছি এবং আমি আপনার স্বাশ্রয় প্রার্থনা করছি এর অমঙ্গল হতে, এর মধ্যকার অমঙ্গল হতে এবং যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার অমঙ্গলসমূহ হতে।
মিকম্পসহ যাবতীয় দুর্যোগ থেকে বাঁচার দোয়া
চারণ : ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ।’ (বুখারি ও মুসলিম)
চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনজ জ্বালিমিন।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৭)
পদাপদ থেকে আত্মরক্ষায় প্রতিদিনের দোয়া
পুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেহ সকাল এবং সন্ধ্যায় নিন্মোক্ত দোয়াটি পড়বে; তাকে কোনো বিপদাপদ, বালা-মুছিবত র্শ করবে না- উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহিল লাজি লা ইয়াদূররু মাআস মিহি শাইয়ুন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামিই ওয়াহুয়া সামিয়ুল আলিম।’ (তিরমিজি,
নু মাজাহ, মিশকাত)। পরিশেষে বৃষ্টিসহ সব বিপদকালীন সময়ে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শিখানো দোয়া ও আমল করার পাশাপাশি শি বেশি তাওবা ও ইসতেগফার করা উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য আবশ্যক পালনীয়।
লিম উম্মাহর উচিত প্রবল বৃষ্টিপাতসহ ঘূর্ণিঝড়, ঝড়ো বাতাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সব ধরনের দুর্যোগে এ দোয়াগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআলার নিকট গয় লাভে রোনাজারি করা। আল্লাহ্ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ দোয়া ও আমলের মাধ্যমে প্রবল বৃষ্টিপাতসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে াজত করুন। আমিন